পেনসিলভানিয়া, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সর্বশেষ:
জামায়াতে যোগ দিলেন অর্ধশতাধিক বিএনপি–জাপা নেতাকর্মী জাপা ও জেপির নেতৃত্বে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ৮ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস আজ আমার হায়াত কমিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে দেন জোট গঠনের বিষয়ে যা বললেন সারজিস বিএনপির সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করল বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১০ ডিসেম্বর তফসিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে না, বরং পুনর্গঠনের পথে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে যেসব আধুনিক সুবিধা দেশে এল তারেক রহমানের ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার গাড়ি, বিআরটিএতে নিবন্ধন সম্পন্ন পুলিশ কমিশন গঠন হচ্ছে, অধ্যাদেশ অনুমোদন নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে আম জনতার দল, চেয়েছে প্রজাপতি প্রতীক অক্সফোর্ড ইউনিয়নের আমন্ত্রণ পেলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন কমান্ডো এনএসজিসহ ২৪ ভারতীয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

শেখ হাসিনার যত ভুল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৫৭ এএম, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

সমাজের একটি বড় অংশের মানুষ যখন ভোটাধিকার, মানবাধিকার, মৌলিক চাহিদার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তারা সরকার বা শাসকের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। ক্রমেই জমতে থাকা এই অসন্তোষ একসময় রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। সাধারণ জনগণের এই সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি গণ-অভ্যুত্থান। যুগে যুগে এই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পরাজয় বরণ করেছে শাসক ও শোষকরা।

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ছিলেন এমনই এক স্বৈরশাসক। ইতিহাসের চরম শিক্ষা হচ্ছে, কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন না। শেখ হাসিনাও শিক্ষা নেননি। শিক্ষা নেননি তার বাবার করুণ মৃত্যুর ঘটনা থেকে। শিক্ষা নেননি ইয়াজিদ থেকে অ্যাডলফ হিটলার বা জোসেফ স্ট্যালিন- দুনিয়াজুড়ে অসম্ভব প্রতাপশালী পতিত স্বৈরাচারের পরিণতি থেকেও। তাই পতন শেখ হাসিনারও অনিবার্য ছিল। কিন্তু এতটা নির্মমভাবে পতন ঘটবে তা হয়তো তিনি নিজেও কল্পনা করেননি।


ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরেরও বেশি শাসনামলের ইতি ঘটে। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে এটি ছিল বিরল এবং ব্যতিক্রমী ঘটনা। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির খুব কমই আছে।


শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন পাঁচ হাজার ৬৯০ দিন। এর মধ্যে ভালো-মন্দ সব কাজই ছিল তার ঝুড়িতে। তবে তার বেশির ভাগ কাজই ছিল জনস্বার্থবিরোধী। জনমত উপেক্ষা করে তিনি নিজের মতো দেশ শাসন করতে চেয়েছেন, দেশ শাসন করেছেন। যার কারণে ধীরে ধীরে তিনি একজন প্রতাপশালী স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন। পতনের এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে শেখ হাসিনার ভুলগুলো নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু তার মাঝে এসব নিয়ে কোনো অনুতাপ নেই। বরং দিল্লির মাটিতে বসে এখনো তিনি নিজের সাফাই গাইছেন। কণ্ঠে তার সেই চিরচেনা দম্ভোক্তি। 


শেখ হাসিনার শাসনামল এবং তার কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা নিজের পায়ে প্রথম কুড়াল মারেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। এর মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটি সর্বজনীন ব্যবস্থার অবসান ঘটান। দেশের নির্বাচনিব্যবস্থাকে তিনি পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। আর তাই নিজের খেয়াল খুশিমতো কখনো দিনের ভোট রাতে, কখনোবা বিনা ভোটে একরতফা প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে থাকেন।


বিরোধী দল, ভিন্নমত দমনেও শেখ হাসিনা নজির স্থাপন করেন। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু কেউ লিখলে তাদের গ্রেফতারসহ নানাভাবে নির্যাতন ছিল হাসিনার শাসনামলের ভয়াবহ চিত্র। অনেকেরই মতে, শেখ হাসিনার আরেকটি বড় ভুলÑ তার লাগামহীন কথাবার্তা। তিনি অপমান করে, হেয় করে, অসম্মান করে কথা বলতেন। ন্যূনতম সৌজন্যতার ধার ধারতেন না। কথায় কথায় রাজাকার, জঙ্গি, দেশবিরোধী বলাটা যেন ছিল শেখ হাসিনার নিয়মিত বুলি।


বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা কেবল গণতন্ত্রকে হত্যা ও বিরোধী মতকে দমনই করেননি, তিনি তার দীর্ঘ শাসনামলে রাজনীতি শতভাগ নিয়ন্ত্রণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেন। নিজে এবং নিজের পরিবারের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, নিজে টাকা লুট করা ও নিজের পরিবার, ঘনিষ্ঠজন এবং ভিনদেশীদের লুটে সহায়তা করেন। ভারতের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে পড়া, তথাকথিত ভারসাম্যের নামে দেশকে বন্ধুহীন করে তোলা, দেশের নিয়ন্ত্রণ অন্য শক্তির কাছে তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের বিপদ বাড়ান।


তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করাকেও ভালোভাবে নেয়নি দেশের মানুষ। শেখ মুজিবকে তিনি পারিবারিক সম্পদে পরিণত করেছিলেন। পরিবার তোষণ, পরিবারের বাইরের কাউকে তিনি বিশ্বাস করতেন না। কারণে অকারণে বিদেশ-বিভূঁই, সরকার এবং দলকে এক করে ফেলা, ত্যাগি ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না করা, হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারাও ছিল তার বড় ভুল। 


এছাড়াও বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সর্বত্র নিজের কব্জায় নেওয়া, ছাত্রগীল-যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখা ডুবিয়েছে শেখ হাসিনাকে। সর্বোপরি শেখ হাসিনা নিজেকে ব্যক্তিপূজায় পুরোপুরি সঁপে দিয়েছেন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। তার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে যারা তোয়াজ করে কথা বলত, তাদের নানা সুযোগ সুবিধা দিতেন। বিনিময়ে নিজের অপকর্ম ঢাকতেন।


সর্বশেষ ছাত্র-যুবক এবং তরুণদের কোটার দাবি অগ্রাহ্য করা ছিল শেখ হাসিনার পতনের শেষ ধাপ। এই দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ঠেকাতে তিনি দমন-পীড়নসহ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পথ বেছে নেন। ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলেও অপমান করেন। যার ফলে মুহূর্তে ফুঁসে ওঠে দেশের মানুষ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য ও অভিভাবকরাও যুক্ত হন শেখ হাসিনাকে হটানোর মিছিলে। এক সঙ্গে নামেন সবাই রাজপথে। যার ফল শেখ হাসিনার বিদায়।

মন্তব্যঃ

দুঃখিত, কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি!

নতুন মন্তব্য করুন:

ad
সকল খবর জানতে ক্লিক করুন
ad